প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, পুলিশ কনস্টেবল জামিনে
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
০৪-০১-২০২৫ ০৩:৪৮:০৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৪-০১-২০২৫ ০৩:৪৮:০৯ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
গত ৫ই আগস্টের মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা। ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। এই দৃশ্য যে কারও অন্তরে কাঁপন ধরাবে। যেখানে কলেজপড়ুয়া একটি ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারছে।
কেউ কেউ আবার কলার ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। একটু দূর থেকেই দৌড়ে এলো এক পুলিশ সদস্য। কাছে এসেই কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয়ের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলো। গুলির বিকট শব্দ। মাত্র ৩ সেকেন্ডেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। ছটফট করে হাত-পা নাড়তে থাকেন। দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে পারেননি। একটু পরেই নিথর হয়ে যায় মাটিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের দেহ। স্রোতের বেগে রক্ত বের হতে থাকে। অল্প সময়ে রাস্তা লাল হয়ে যায়। পরনের কাপড় ভিজে যায়। গুলি করেই পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে। এসে নিথর দেহ পা দিয়ে ঠেলে দেখতে থাকে মৃত্যু হয়েছে কি না। পরে ৪জন পুলিশ সদস্য মিলে হৃদয়ের গুলিবিদ্ধ মরদেহ হাত-পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে দূরে কোথায় নিয়ে যান। কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো হৃদয়ের মৃতদেহ? কেউ জানে না এখনো।
নিহত হৃদয়ের লাশ তার স্বজনদের ফেরত দেয়নি পুলিশ। লাশ কোথায় রাখা হয়েছে। দাফন করা হয়েছে নাকি ফেলে দেয়া হয়েছে, তা এখনো জানতে পারেনি হৃদয়ের পরিবার। হৃদয়ের নিহতের ঘটনার একটি ভিডিও গত ৩০শে আগস্ট ভাইরাল হয়। এতে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। গাজীপুর কোনাবাড়ী থানা রোডে শরীফ মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তার ওপরে ৫ই আগস্ট বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বিপাকে পড়ে পুলিশ। গুলি ছোড়া পুলিশ কনস্টেবল আকরামের নামও প্রকাশ্যে চলে আসে। পরে চাকরি থেকে পালিয়ে কনস্টেবল আকরাম হোসেন নিজ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বরুহাতে চলে যায়। গত ৬ই সেপ্টেম্বর আকরামকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে এই মামলার এজহারনামীয় আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য আসামি আকরামের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। তবে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপরে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যায়। যা আর প্রকাশ্যে আসেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উৎপল কুমার সাহার দেয়া এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল হওয়া ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কনস্টেবল আকরাম হোসেন তার ব্যবহৃত শটগান দিয়ে ভিকটিম হৃদয়কে পেছন দিক থেকে গুলি করে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে ঘটনার সঙ্গে আকরামের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য কনস্টেবল আকরামকে কারাগারে রাখা ও জামিন না দেয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করা হয়। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত ২৩শে ডিসেম্বর গাজীপুর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক প্রধান অভিযুক্ত আকরামকে জামিন দেন। রাতেই কারাগার থেকে বেরিয়ে যান আকরাম। এতে অবাক হয় পুলিশও। সূত্র বলছে, জামিনে বেরিয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল আকরাম হোসেন। আকরামের গ্রামের বাড়ির একটি সূত্রে জানা গেছে, জামিনের পরে সে আর বাড়িতে ফেরেনি। পরিবারের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখছে না আকরাম। তবে সে ২৬শে ডিসেম্বর দেশ ছেড়েছে বলে ওই সূত্র দাবি করেছেন।
হৃদয়ের লাশ কোথায়: অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলি করে হত্যার পর হৃদয়ের মৃতদেহ প্রথমে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর ২০জন কনস্টেবল, কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সদস্যরা টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে লাশ রেখেই পালিয়ে যায় শিল্পাঞ্চল পুলিশের সদস্যরা। পরে হাজার হাজার মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে এলে ভয়ে অধিকাংশ পুলিশ সদস্য থানা ছেড়ে পালাতে থাকে। থানায় নেয়া লাশ পরে কোথায় কীভাবে রাখা হয় তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত হৃদয় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি টাঙ্গাইল হেমনগর ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। অভাবের সংসারের হাল ধরতেই তিনি গাজীপুরে এসে অটোরিকশা চালাতেন। গত ৬ই আগস্ট থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে খুঁজেও হৃদয়ের লাশের সন্ধান পায়নি পরিবার। পরে ৭ই আগস্ট থানায় গিয়ে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখতে পায়নি পরিবারের লোকজন। মূলত ৫ই আগস্ট থেকে ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত পুলিশশূন্য ছিল কোনাবাড়ী থানা। এতে গুলিতে নিহত হৃদয়ের লাশের সন্ধান পেতে বারবার থানায় এসেও কোনো পুলিশ সদস্যকে পায়নি পরিবার। এরমধ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে পুলিশে ব্যাপক রদবদল করা হয়।kaler kont---
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স